শ্রুতি ১ ঘন্টা যাবৎ রাগ করে নিলয়ের পাশে বসে আছে। আর ঐ দিকে নিলয় খুব আরামে ঘুমাচ্ছে। রাগ করে বসে থাকলেও কি হবে?
শ্রুতি অদ্ভুত ভাবে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। নিলয়ের দিকে ঘুমন্ত অবস্থা তাকিয়ে থাকতে তার খুব ভাল লাগে। কারণ শ্রুতি মনে এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় অনুভুতি হল আপন মানুষটিকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখা। তাই সে দেখছে এই পৃথিবীতে তার সবচেয়ে আপন মানুষটিকে। আর রাগ থাকলে সে প্রকাশ করে না।
শ্রুতির রাগ করাটা স্বাভাবিক। কারণ আর কিছুক্ষন পর শ্রুতির জন্মদিন। সে চেয়ে ছিল নিলয় তাকে সর্ব প্রথম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাবে কিন্তু নিলয়......................?
শ্রুতি ভাবতে ভাবতে নিলয়ের পাশ থেকে সরে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
কিছুক্ষন পরেই নিলয় পিছন থেকে,
''শুভ জন্মদিন আমার ভবিষ্যত বাবুর আম্মু''
অমনি শ্রুতি পিছনে ঘুরে নিলয়ের বুকে মাথা রেখে বাচ্চা মেয়ের মত হু হু করে কেঁদে উঠে। (আর কাঁদবেও না বা কেন?
তার ভবিষ্যত বাবুর বাবাটা যে অনেক পঁচা। তার পঁচার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল তার ভবিষ্যত বাবুর বাবা তাকে অনেক ভালোবাসে)
এর মধ্যে নিলয়ের মা-বাবা চলে এসেছে,
''শুভ জন্মদিন মা''
নিলয়ের মা বাবা শ্রুতিকে ছেলের বৌয়ের মত না, নিজের মেয়ের মত রেখেছে এবং ভালোবাসে।
শ্রুতি আজ অনেক খুশি। কারণ সে পরিবারের সুখ দুঃখগুলো কেমন হয় জানতো না। সে একটা অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছে। দুঃখতো দুরের কথা, পরিবারের সকল সদস্যরা তাকে এতো বেশি ভালোবাসা দিয়ে রেখেছে সে তার জীবনে পরিবার না থাকার সব দুঃখ কষ্ট ভুলে গেছে।
ঠিক ১ বছর ৬ মাস আগে বন্ধুদেরকে নিয়ে ঘুরতে গিয়ে একটা শপিং মলে শ্রুতি দেখে নিলয়। প্রথম দেখাতেই শ্রুতিকে তার খুব ভাল লাগে। যাকে বলা হয় Love First site.
এর পর শ্রুতির পিছনে পিছনে যায় নিলয়। নিলয় দেখে শ্রুতি একটা অনাথ আশ্রমে যায়। নিলয় ভাবে কোন কাজে এসেছে সে এখানে। প্রায় দু'ঘন্টা অপেক্ষা করে নিলয় কিন্তু শ্রুতি বের হয়ে আসে না।
পরে নিলয় খোঁজ নিয়ে জানতে পারে শ্রুতি এখানে থাকে। তার মা বাবা কেউ নেই। শ্রুতির জন্মের ৪ মাস পরে তার মা এবং ১ বছর পর তার বাবা মারা যায়। এরপর তার চাচা তাকে এখানে দিয়ে যায়।
নিলয় তার মা বাবার আদরের সন্তান। সে তার মা বাবা কে খুব ভালোবাসে। সে সব সময় তার মা বাবার সাথে সব কিছু শেয়ার করে।
নিলয় বাসায় গিয়ে সব কিছু তার মা বাবা কে খুলে বলে এবং তার মা বাবা ও রাজি হয়।
নিলয় চিন্তা করছে সে শ্রুতিকে বিয়ে করবে এবং তার মা বাবা রাজি হওয়াতে সে একটু ভরসা পাই।
নিলয় সরাসরি তার মা বাবাকে নিয়ে ঐ আশ্রমে যায় এবং আশ্রমের প্রধানের কাছে শ্রুতিকে বিয়ে করার প্রসাব দেয় এবং তিনি প্রস্তাবে রাজি হন।
৭ মাস পরে তাদের বিয়ে হয়। (শ্রুতি অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী হওয়াতে পরীক্ষার কারণে তাদের বিয়েতে সময় লাগে)
বিয়ের পরে এটাই শ্রুতির প্রথম জন্মদিন। তাই নিলয়কে ঘুমানো অবস্থায় দেখে খুব একাকী অনুভব করছিল।
শ্রুতি নিলয়ের মত জীবন সঙ্গী এবং নিলয়ের পরিবারের সদস্য হতে পেরে নিজেকে খুব সৌভাগ্যবতী মনে করছে।
সে সারা জীবন তাদের সেবা করে কাটিয়ে দিতে চাই এবং সবাই জেনো তাকে সারা জীবন এভাবে ভালোবাসে।

Comments

Popular posts from this blog