#_ভালোবাসার_গল্প_একটি_রুম_ডেট_এবং_কিছু_বাস্তবতা
বন্ধুর নির্জন ফ্ল্যাটটি ম্যানেজ করে একটি ছেলে এসেছে তার প্রেমিকাকে নিয়ে। এটি তাদের প্রথম ‘রুম-ডেট’।
দরজা লক করে ছেলেটি মেয়েটিকে নিয়ে বেডরুমে চলে যায়। চঞ্চল মেয়েটি হাসিমুখে অনর্গল বকবক করছে। আর সাবধানী ছেলেটি ব্যাস্ত রুমটি পরীক্ষা করতে। পর্দার মাঝে কোন ফাক আছে কিনা, রুমে কোন ক্যামেরা লুকোনো আছে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি।
ছেলেটির রুম চেক শেষ করে মেয়েটির সামনে এসে দাঁড়ালো। মেয়েটি সময় হয়েছে বুঝতে পেরে লাজুক ভাবে মাথা নিচু করে রইলো। চুপ করে ছেলেটির কাছে নিজেকে সমর্পন করলো।
…… সময় কেটে যায়… এক ঘন্টা… দেড় ঘন্টা….এক বিছানায় দুজনের প্রায় পৌনে দু’ঘন্টা নিষিদ্ধ সময় কেটে যায় …. ক্লান্ত হয়ে একসময় ছেলেটি বিছানার পাশে পরে থাকা তার চশমা তুলে নেয়। দুজন মানুষের ঘাম ও নিঃশ্বাসের বাষ্পে চশমাটি ঘোলা হয়ে আছে। ছেলেটি তার চশমাটি পাশে শুয়ে থাকা মেয়েটির হাতে দিয়ে দেয়। মেয়েটি অভ্যাসবশত চশমাটি মুছতে যেয়ে থমকে যায়। কিছুক্ষন এদিক ওদিক তাকিয়ে অতঃপর বিছানার কভারের কোনা দিয়ে চশমাটি মুছে দেয়। সচরাচর মেয়েটি তার ওড়না দিয়ে ছেলেটির চশমা মুছে দিতো। কিন্তু এখন নগ্ন মেয়েটির আশেপাশে কোন ওড়না বা কাপড় নেই।
ছেলেটি ধীরে ধীরে বিছানা থেকে উঠে বসে পড়েছে। বিছানার দুপাশ আঁকড়ে ধরে মেঝের দিকে চেয়ে আছে। মেয়েটি ছেলেটির মনযোগ না পেয়ে একা একা ফ্রেশরুমে চলে যায়।
কিছুক্ষন পর যে মেয়েটি গোসল করে ফ্রেশরুম থেকে বের হলো, সে মেয়েটিকে ছেলেটি আসলেই চিনেনা। মেয়েটি ধীরে ধীরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে যেয়ে সারা মুখে কমপ্যাক্ট মাখলো। চোখে কাজল দিলো। ঠোটে লিপস্টিক। হ্যা, এখন মেয়েটিকে ছেলেটি চিনতে পারছে। তার চার বছর ধরে পরিচিত পুরনো প্রেমিকা। যার সাথে সে কিছুক্ষন আগে রুম-ডেট করেছে।
খুশি হয়ে ছেলেটি মেয়েটিকে আরেকটু আদর করে দিলো। হাসিখুশি প্রেমের গল্প করলো।কিছু সেল্ফি তুললো। তারপর ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে পিজ্জা ইন এ লাঞ্চ করে একসাথে আরো কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করে অতঃপর মেয়েটিকে তার বাসায় পৌছে দিলো।
———————————–
এখন রাত। ছেলেটি তার নিজের বাসায়। নিজের রুমে একা বসে আছে।
ছেলেটি প্রচন্ড অনুশোচনায় ভুগছে। নিজের প্রেম নিয়ে তার কিছু আবেগ আজ নস্ট হয়ে গেছে। কিছু ভ্রম আজ ভেংগে গেছেঃ
১) মেধাবী ও সুন্দরী মেয়েটির দুর্লভতা/কাঠিন্য/ ভাব/ অহংকার/ ব্যাক্তিত্বের টানে ছেলেটি মেয়েটির উপর একসময় ক্রাশ খেয়েছিলো। পরে সেই ক্রাশ থেকে প্রেম।
কিন্তু আজ বন্ধুর ফ্ল্যাটে মেয়েটি যখন তার জন্য ‘সুলভ’ হয়ে গেলো, মেয়েটি নিজেকে যখন ছেলেটির কাছে পুরোপুরি সমর্পন করে দিলো, তারপর থেকে মেয়েটিকে আর তেমন আকর্ষনীয় লাগছে না। মেয়েটির জন্য আর ‘ফিলিংস’ আসছে না। কেমন যেন মেয়েটিকে সস্তা লাগছে।
২) ছেলেটির কাছে মেয়েটির শরীর/ ফিগার প্রচন্ড আকর্ষনীয় লাগতো। সেলোয়ার কামিজ, বা জিন্স/লেগিংস পড়া স্লিম প্রেমিকার ফিগার দেখে ছেলেটি স্বপ্নের ফানুস উড়াতো। প্রেমিকাকে নগ্ন কল্পনা করতো। ইশ! না জানি কত পারফেক্ট আর আকাশের পরীর মতোদেহবল্লরী তার প্রেমিকার।
কিন্তু আজ নিরাভরন প্রেমিকার নগ্ন শরীর দেখে তার মোহ ভাংগে। প্রেমিকার কিছুটা ঝুলে থাকা শরীর, তলপেটের ভাজে ভাজে লুকোনো মেদ, বুকে হাতে ফাটা দাগ, কালো হয়ে থাকা শরীরের খাজগুলো দেখে প্রেমিকের মোহভংগ হয়। এই তবে নারী শরীর! কিন্তু এই নগ্ন শরীরতো কল্পনা/ ব্লু ফিল্ম/ হিন্দী মুভির নায়িকার সাথে খাপ খায়না!
৩) যৌনতার মুহুর্তগুলো, মেয়েটির ত্বকের স্বাদ, ঘামের গন্ধ কোন কিছুই কল্পনার অনুযায়ী ‘আপ টু দ্যা মার্ক’ ছিলো না। অথচ যৌনতা নিয়ে ছেলেটির প্রচন্ড ফেসিনেশন ছিলো। আর সেই ফেসিনেশনের স্বপ্নে ছিলো তার প্রেমিকা। কিন্তু যৌনতার প্রথম অভিজ্ঞতার পর অন্ধ ফেসিনেশনটিও এখন আর তার কাজ করছে না।
……………………………………………….
রাত বাড়ছে….. বাড়ছে ছেলেটির অনুশোচনা…. আর ফ্রাস্টেশন…… কি খারাপ একটি কাজ করে ফেললো সে….. রুম-ডেট করলো….. অযথা….
অনুশোচনায় পুড়তে থাকা ছেলেটির মন এখন বারবার চাচ্ছে মেয়েটি থেকে পালিয়ে যেতে। অনেক অনেক দূরে। যদি সে আর মেয়েটি এখন উত্তর মেরুতে থাকে, তাহলে সে এখন চাচ্ছে মেয়েটিকে ফেলে এক দৌড়ে দক্ষিন মেরুতে চলে যেতে। কারন মেয়েটির সাথে কথা বললেই/মেয়েটির চেহারা দেখলেই তার আজকের রুম ডেটের কথা মনে পড়বে। আর তাছাড়া এই মেয়ের সাথে সে এখন কিইবা করবে! তার মন উঠে গেছে মেয়েটার কাছ থেকে। মন থেকে প্রচন্ড বিকর্ষন আসছে মেয়েটার প্রতি। আসবেই বা না কেন, যা কিছু আকর্ষন ছিলো সব কিছু তো আজ পূরন হয়েই গেছে।
ছেলেটি হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলো। এই মেয়েটিকে সে ছেড়ে দিবে। তারপর মা বাবার পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে করবে। তাহলে তার মতো ‘সুবোধ’ ছেলের পাপের প্রায়শ্চিত্ত হবে। বাবা মা’র পছন্দমতো বিয়ে করলে কমবয়সী সুন্দরী আনকোরা বউ পাওয়া যাবে, সাথে প্রতিষ্ঠিত শ্বশুড় বাড়ি আর মা বাবার দোয়া, সবকিছু মিলে সুন্দর জীবন হবে তার। অথচ নিজের প্রেমিকা নিয়ে ভেবে কি লাভ যার ব্যাপারে তার এখন কোন আবেগই নেই, যার মা বাবা’র সামাজিক স্ট্যাটাস নিয়েও সে নিশ্চিত না।
মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেলো ছেলেটির। সে তার প্রেমিকার সাথে কৌশলে ব্রেক আপ নিবে। তাতে ঝামেলা হয় হোক, দুই তিন মাস খারাপ সময় গেলে যাক, তার বদলে জীবন শুধরে ভবিষ্যতের ত্রিশ বছর তো ভালো কাটবে অন্তত! ব্যাস! ব্রেক আপ নেয়ার ডিসিসান ফাইনাল!…. ছেলেটির নিজেকে এখন ভারমুক্ত লাগতে লাগলো।…..
——————————–
অতঃপর মাঝরাত…… হঠাৎ প্রেমিকাটি ছেলেটিকে কল দেয়। ছেলেটা সন্তর্পনে কল রিসিভ করে।
প্রথমে মেয়েটি তার স্বাভাবিক সুরে ছেলেটার সাথে কথা বলতে শুরু করে। কিন্তু ছেলেটা তেমন সাড়া দেয়না। তাই মেয়েটি এবার আদুরে গলায় কথা বলা শুরু করে, যদি ছেলেটির উপর কোন ‘যাদু’ হয়। কিন্তু এবারো ছেলেটি ঠান্ডা গলায় কথা বলতে থাকে।
অতঃপর মেয়েটি খোলশ ছেড়ে বের হয়। সাদা গলায় অনুনয় করে উঠে, ‘বাবু আজকে তো তোমার ইচ্ছেমতো সব করেছি, এখন আমাকে বিয়ে করবে তো তাইনা??’……
মেধাবী ছেলেটি সাথে সাথে ভোল পালটে দ্রুত বলা শুরু করে, ‘‘‘‘আরে না বাবু কি যে বলো, এখন কি আর লেট করবো নাকি, আমাদের ভেতর তো সবকিছু হয়েই গেছে। তাই খুব দ্রুত বিয়ের প্রপোজাল পাঠাবো তোমার বাসায়। তবে প্রব্লেমটা হচ্ছে কি আমার আম্মু এখন একটু অসুস্থ… তারপর… তারপর…. উনি সুস্থ হতে ৭ দিন লাগবে….তারপর… তারপর…. সামনের সপ্তাহে আব্বু অফিস ট্যুরে ঢাকার বাইরে যাবে….তারপর… তারপর…. এদিকে আমার আবার দেশের বাড়ি যেতে হবে ধান কাটার টাকা তুলতে, এ বছর থেকে আমি ধান কাটার টাকা তুলতে যাবো, বাবা গতকাল গ্রামে জমি কিনেছে তোমাকে বলা হয়নি….তারপর… তারপর…. হ্যা তারপর বিয়ের প্রপোজাল পাঠাবো টেনশন নিয়োনা….’’’’
———————————
মেয়েটি ধীরে ধীরে ফোন রাখে….. রুম-ডেট নিয়ে অনুশোচনা তারও হয়েছে, হচ্ছে। বরং মেয়ে হিসেবে সামাজিক বাস্তবতায় ছেলেটার চেয়ে তার পাপবোধ বেশি। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে, যেখানে ছেলেটি ভাবছিলো মেয়েটি থেকে সরে গেলে তার প্রায়শ্চিত্ত হবে, সেখানে মেয়েটি ভাবছিলো ছেলেটিকে বিয়ে করলে তার পাপমুক্তি হবে।
কিন্তু এখন মেয়েটিও টের পেয়েছে যে ছেলেটি আর আগ্রহী নয়। হয়তো ছেলেটিকে বিয়ে করতে জোর করা যাবে কিন্তু প্রেম তো আর ফিরে আসবে না। কারন প্রেমে পড়া আর তারপর প্রেম উড়ে যাওয়া, দুটোই ন্যাচারেল, সেখানে জোর চলেনা।
ধীরে ধীরে মেয়েটি আয়নার সামনে দাড়ায়। মেয়েটির এখনো তলপেটে ব্যাথা, সারা শরীর জুড়ে ব্যাথা , এখানে সেখানে ত্বক এখনো লাল হয়ে আছে।
যদি এসব ব্যাথা আর দাগ বিয়ের পর স্বামীর সাথে সহবাসের কারনে হতো, তাহলে ‘বাংগালী’ মেয়ে হিসেবে মেয়েটির গর্বই হতো। যদি প্রেমিকের মন এখনো তাকে ভালোবাসতো, তাহলে বিয়ের আগের এই রুম-ডেট নিয়ে অন্তত ভালোলাগা হলেও কাজ করতো।
কিন্তু এখন তার খারাপ লাগছে , প্রচন্ড খারাপ। মনে হচ্ছে এই ব্যাথা আর দাগ সবই তার দিকে আংগুল তুলে তাকে দোষী করাচ্ছে, তাকে পাপী প্রমান করছে, অনেক পাপী।
যার দায়ভার কেউ নিবেনা, কেউ নিতে চাচ্ছে না। ক্ষনিকের এডভেঞ্চার হিসেবে প্রেমিকের সাথে রুম ডেট করে আসা মেয়েটি আয়নার সামনে এখন অজানা ভয়ে কাদছে…… মাঝরাতে… একা।

Comments

Popular posts from this blog