ইশিতাকে আজ অসাধারণ লাগছে লাল
বেনারসি শাড়িতে।
সাব্বির এই প্রথমবার তাকে স্কার্ফ
ছাড়া দেখছে। কাঁধ পর্যন্ত লম্বা
স্ট্রেইট সিল্কি চুলগুলোর দিক থেকে
চোখ সরাতে কষ্ট হচ্ছে তার।
.
"এই সাব্বির!"
.
ইশিতার হঠাৎ ডাকে লজ্জা পেয়ে
গেল সাব্বির। চোখ সরিয়ে রাস্তার
পাশের দোকানের দিকে গভীর
মনযোগ দিয়ে তাকাল সে।
.
- "কি দেখছিলা ঐভাবে?"
ইশিতার গলায় চাপা হাসি।
.
সাব্বির একটু লাল হয়ে বলে,
- "না মানে স্কার্ফ ছাড়া আগে দেখি
নাই তো, তাই অন্যরকম লাগছে..."
.
ইশিতা হাত দিয়ে নিজের চুলগুলো
এলোমেলো করে বললো,
- "আমারো অন্যরকম লাগছে। কি যেন
নাই মনে
হচ্ছে"
.
সাব্বির কিছু বললো না।
রিক্সা ওয়ালা আয়েশ করে প্যাডেল
মারছে। তার ছেড়া স্যন্ডেলের দিকে
তাকিয়ে সাব্বির তিন বছর আগে
পিছিয়ে গেল।
---------
একুশে বই মেলায় ইশিতার সাথে প্রথম
দেখা।
কবিতার বই উলটে পালটে দেখছিলো
মেয়েটা। মেয়েটার সাথে থাকা
কয়েকজন বন্ধুর মধ্যে তারও বন্ধু ছিল।
সেখানে পরিচয়...
তারপর গত তিন বছরে কত যায়গায় কত
অকেশনে তাদের দেখা হয়েছে-
পহেলা বৈশাখে রমনার
বটমূল, বাণিজ্য মেলা বা ভার্সিটির
কালচুরাল ফাংশন- যতবার দেখা
হয়েছে, নতুন ভাবে মেয়েটার
সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছে সাব্বির।
তারচেয়েও বেশি ভাল লেগেছে
মেয়েটার শার্প পার্সোনালিটি।
মেয়েটার বুদ্ধিদীপ্ত চোখ।
------------
আজ প্রথম বারের মত মেয়েটার পাশে
বসে রিক্সায় চড়ার সুযোগ হয়েছে।
.
অন্যমনস্ক ছিল সাব্বির, ইশিতা হঠাৎ
রিক্সা থামাতে বলায় চমকে উঠলো।
.
- "খুব পিপাসা পেয়েছে সাব্বির,
পানি খাব"
.
সাব্বির পায়ের কাছে রাখা বড় দুইটা
লাগেজের দিকে একটা
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
- "একমিনিট বস।"
.
একমিনিটের জায়গায় দশ মিনিট
লাগালো সাব্বির। পানির বোতলের
সাথে তার হাতে একটা বড় প্যাকেট।
ইশিতা প্রশ্ন করার আগেই সাব্বির
বললো,
- "ট্রেইনে খেতে হবে তো"
.
ইশিতার মুখে প্রশংসার হাসি ফুটে
উঠলো। সাব্বির চোখ সরিয়ে নিল।
-------
রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে দারুন ভীর।
তার মাঝেই একহাতে ভারী একটা
ব্যাগ, আরেক হাতে লাগেজ টেনে
জায়গা করে হাঁটছে সাব্বির, তার
ঠিক পিছনেই ইশিতা। ইশিতার চোখে
অস্থিরতা, ইতি উতি করে কাকে যেন
খুজঁছে।
.
"ঝ" বগির সামনে আসতেই
সাদা শার্ট পরা লম্বা এক যুবক প্রায়
ছুটে এসে ইশিতার হাত চেপে ধরলো।
সাব্বির ব্যাগ দুইটা নামিয়ে অল্প
হাঁপাতে লাগলো।
.
ছেলেটা এবার ইশিতাকে ছেড়ে
সাব্বিরকে জড়িয়ে ধরলো,
- "অনেক অনেক থ্যাংকু তোরে দোস্ত,
তুই ছাড়া আর কেউ এত করতো না রে..."
.
সাব্বির বিরক্ত গলায় বললো,
- "আরে ছাড় বেটা, এমনি ঘামায়
গেসি"
.
ছেলেটার মুখে হাসি, চোখে পানি।
সাব্বির কে ছেড়ে সে লাগেজ দুইটা
নিয়ে ইশিতাকে ট্রেনে উঠিয়ে
দিতে গেল।
.
সাব্বির প্লাটফরম থেকে
একবোতল পানি কিনে খেতে লাগল।
কিছুক্ষণ পর ছেলেটা নেমে এল ট্রেন
থেকে...
সাব্বির এগিয়ে গিয়ে
তাকে শক্ত করে ধরে বললো,
- "হিমেল, যেই ভালবাসাটুকুর জোরে
এত বড় সিদ্ধান্ত নিচ্ছিস, সেটা যেন
ঠুনকো না হয়ে যায়। তোদের দুই জনের
জন্য আমি অনেক বড় ঝুঁকি নিতে পারি,
কিন্তু তারপর যদি শুনি তোদের মধ্যে
কোনো
ঝামেলা হইসে, কসম বললাম, আমি
নিজে এসে তোদের দুইটাকে
পিটিয়ে হাড্ডি মাংস গুড়া করে
ফেলব"
.
হিমেল জোরে হেসে উঠে।
প্লাটফর্মের কেউ কেউ ঘুরে তাকায়
তাদের দিকে।
....
হুইসেল দিয়ে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে।
জানালা দিয়ে হিমেল আর ইশিতা
পাগলের মত হাত নাড়ছে। সাব্বিরও
হাসি মুখে হাত নাড়তে নাড়তে মনে
মনে ভাবলো,
- "বিদায় ইশিতা। আমার
যে ভালো লাগাটুকু মুখ ফুটে কখনও
বলতে পারিনি, তার চেয়েও বেশি
ভালবাসা তুমি আমার এই বন্ধুটাকে
দিও।"
.
ঘুরে ফেরার পথ ধরে সাব্বির, অনেক
কাজ বাকি। সাব্বিরের মত কেউ কেউ
ভালবাসে অকারণেই, কোনো
প্রাপ্তির আশা ছাড়া এসব ভালবাসাই
হয়তো আমাদের এই পাপ-পংকিল
পৃথিবীটাকে এখনো বাঁচিয়ে
রেখেছে।
বেনারসি শাড়িতে।
সাব্বির এই প্রথমবার তাকে স্কার্ফ
ছাড়া দেখছে। কাঁধ পর্যন্ত লম্বা
স্ট্রেইট সিল্কি চুলগুলোর দিক থেকে
চোখ সরাতে কষ্ট হচ্ছে তার।
.
"এই সাব্বির!"
.
ইশিতার হঠাৎ ডাকে লজ্জা পেয়ে
গেল সাব্বির। চোখ সরিয়ে রাস্তার
পাশের দোকানের দিকে গভীর
মনযোগ দিয়ে তাকাল সে।
.
- "কি দেখছিলা ঐভাবে?"
ইশিতার গলায় চাপা হাসি।
.
সাব্বির একটু লাল হয়ে বলে,
- "না মানে স্কার্ফ ছাড়া আগে দেখি
নাই তো, তাই অন্যরকম লাগছে..."
.
ইশিতা হাত দিয়ে নিজের চুলগুলো
এলোমেলো করে বললো,
- "আমারো অন্যরকম লাগছে। কি যেন
নাই মনে
হচ্ছে"
.
সাব্বির কিছু বললো না।
রিক্সা ওয়ালা আয়েশ করে প্যাডেল
মারছে। তার ছেড়া স্যন্ডেলের দিকে
তাকিয়ে সাব্বির তিন বছর আগে
পিছিয়ে গেল।
---------
একুশে বই মেলায় ইশিতার সাথে প্রথম
দেখা।
কবিতার বই উলটে পালটে দেখছিলো
মেয়েটা। মেয়েটার সাথে থাকা
কয়েকজন বন্ধুর মধ্যে তারও বন্ধু ছিল।
সেখানে পরিচয়...
তারপর গত তিন বছরে কত যায়গায় কত
অকেশনে তাদের দেখা হয়েছে-
পহেলা বৈশাখে রমনার
বটমূল, বাণিজ্য মেলা বা ভার্সিটির
কালচুরাল ফাংশন- যতবার দেখা
হয়েছে, নতুন ভাবে মেয়েটার
সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছে সাব্বির।
তারচেয়েও বেশি ভাল লেগেছে
মেয়েটার শার্প পার্সোনালিটি।
মেয়েটার বুদ্ধিদীপ্ত চোখ।
------------
আজ প্রথম বারের মত মেয়েটার পাশে
বসে রিক্সায় চড়ার সুযোগ হয়েছে।
.
অন্যমনস্ক ছিল সাব্বির, ইশিতা হঠাৎ
রিক্সা থামাতে বলায় চমকে উঠলো।
.
- "খুব পিপাসা পেয়েছে সাব্বির,
পানি খাব"
.
সাব্বির পায়ের কাছে রাখা বড় দুইটা
লাগেজের দিকে একটা
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
- "একমিনিট বস।"
.
একমিনিটের জায়গায় দশ মিনিট
লাগালো সাব্বির। পানির বোতলের
সাথে তার হাতে একটা বড় প্যাকেট।
ইশিতা প্রশ্ন করার আগেই সাব্বির
বললো,
- "ট্রেইনে খেতে হবে তো"
.
ইশিতার মুখে প্রশংসার হাসি ফুটে
উঠলো। সাব্বির চোখ সরিয়ে নিল।
-------
রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে দারুন ভীর।
তার মাঝেই একহাতে ভারী একটা
ব্যাগ, আরেক হাতে লাগেজ টেনে
জায়গা করে হাঁটছে সাব্বির, তার
ঠিক পিছনেই ইশিতা। ইশিতার চোখে
অস্থিরতা, ইতি উতি করে কাকে যেন
খুজঁছে।
.
"ঝ" বগির সামনে আসতেই
সাদা শার্ট পরা লম্বা এক যুবক প্রায়
ছুটে এসে ইশিতার হাত চেপে ধরলো।
সাব্বির ব্যাগ দুইটা নামিয়ে অল্প
হাঁপাতে লাগলো।
.
ছেলেটা এবার ইশিতাকে ছেড়ে
সাব্বিরকে জড়িয়ে ধরলো,
- "অনেক অনেক থ্যাংকু তোরে দোস্ত,
তুই ছাড়া আর কেউ এত করতো না রে..."
.
সাব্বির বিরক্ত গলায় বললো,
- "আরে ছাড় বেটা, এমনি ঘামায়
গেসি"
.
ছেলেটার মুখে হাসি, চোখে পানি।
সাব্বির কে ছেড়ে সে লাগেজ দুইটা
নিয়ে ইশিতাকে ট্রেনে উঠিয়ে
দিতে গেল।
.
সাব্বির প্লাটফরম থেকে
একবোতল পানি কিনে খেতে লাগল।
কিছুক্ষণ পর ছেলেটা নেমে এল ট্রেন
থেকে...
সাব্বির এগিয়ে গিয়ে
তাকে শক্ত করে ধরে বললো,
- "হিমেল, যেই ভালবাসাটুকুর জোরে
এত বড় সিদ্ধান্ত নিচ্ছিস, সেটা যেন
ঠুনকো না হয়ে যায়। তোদের দুই জনের
জন্য আমি অনেক বড় ঝুঁকি নিতে পারি,
কিন্তু তারপর যদি শুনি তোদের মধ্যে
কোনো
ঝামেলা হইসে, কসম বললাম, আমি
নিজে এসে তোদের দুইটাকে
পিটিয়ে হাড্ডি মাংস গুড়া করে
ফেলব"
.
হিমেল জোরে হেসে উঠে।
প্লাটফর্মের কেউ কেউ ঘুরে তাকায়
তাদের দিকে।
....
হুইসেল দিয়ে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে।
জানালা দিয়ে হিমেল আর ইশিতা
পাগলের মত হাত নাড়ছে। সাব্বিরও
হাসি মুখে হাত নাড়তে নাড়তে মনে
মনে ভাবলো,
- "বিদায় ইশিতা। আমার
যে ভালো লাগাটুকু মুখ ফুটে কখনও
বলতে পারিনি, তার চেয়েও বেশি
ভালবাসা তুমি আমার এই বন্ধুটাকে
দিও।"
.
ঘুরে ফেরার পথ ধরে সাব্বির, অনেক
কাজ বাকি। সাব্বিরের মত কেউ কেউ
ভালবাসে অকারণেই, কোনো
প্রাপ্তির আশা ছাড়া এসব ভালবাসাই
হয়তো আমাদের এই পাপ-পংকিল
পৃথিবীটাকে এখনো বাঁচিয়ে
রেখেছে।
Comments
Post a Comment