"যখন এসেছিলে"
আরে গাঁধা এইটা কোনো ব্যাপার !!
জাস্ট মেয়েটার নাম্বারে ২০ টাকা
ফ্লেক্সি করে দিবি তারপর ফোন
দিয়ে বলবি যে, "স্যরি রিচার্জ
করতে গিয়ে ভুলে আপনার নাম্বারে
টাকা চলে গেছে.. তারপর দ্যাখ
ক্যামনে ক্যামনে হয়ে যায় !!...
কথা গুলো এক দমে বলেই অনেকটা
উচ্ছাসের ভঙিতে অভ্রের দিকে
তাকায় অপ্সরী।
"কিন্ত এরপর মেয়েটা যদি আর কল না
দেয়"! কিঞ্চিত অস্থির কন্ঠে বলে
অভ্র।
আরে ধুর ছাগল !! তোর যে সুইট কন্ঠ
মেয়েটা দ্বিতীয় বার কল দিবেই
দিবে ; বাজি লাগবি ?? অনেকটা
আত্ববিশ্বাসের সাথে বলে ওঠে
অপ্সরী। বলেই কেমন যেন আনমনা হয়
মেয়েটি।
অপ্সরীর এই মিথ্যে উচ্ছাস আর শুকনো
চঞ্চলতা কতটুকু আঁচ করতে পারলো অভ্র
কে যানে !! দুজন দুজনের বেষ্ট ফ্রেন্ড ।
শুধু বেষ্ট ফ্রেন্ড বললে ভুল হবে।
মারাত্বক রকমের বেষ্ট ফ্রেন্ড। হাসি
ঠাট্টা, খুনসুটি, ঝগড়া অভিমান ছাড়া
যেনো পেটের ভাত হজমই হয় না ওদের।
দুবছর হল একই ভার্সিটি তে পড়ছে অভ্র
ও অপ্সরী। একজনের প্রবলেম আরেকজন
সুনিপূন ভাবে সলভ করা টা যেন এক
নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়ছে।
গতকাল রাতে ...
- হ্যালো অপ্সরী ?
- ধুর এত রাতে ফোন করসোস ক্যান ??
- একটা কাহিনী হয়ে গেছে রে !!
প্লিজ একটা টিপস দে লক্ষী ..
- ওই কি বললি তুই,,কি বললি ?? কিসের
লক্ষী !! আমি কি তোর প্রেমিকা
লাগি? যাহ প্রেম কইরা
প্রেমিকারে রাত ভর লক্ষী
ডাক,আমি ঘুমাবো
- আরে আমার কথা টা তো শুনবি
- উফফ! এত রাতে কিসের কথা। কতবার
বলসি একটা প্রেমিকা জুটা আমারে
একটু
শান্তি দে। উনি কানেই নেয় না
আমার কথা
- আরে পেঁচী প্রেমিকা তো জুটায়া
ফালাইসি !! সেই কথাই তো বলতে
চাচ্ছি, তুই তো শুনছিসই না আমার কথা
- হি হি কেউ আমারে চাক্কু দিয়া
গুলি কর!! তুই জুটাবি প্রেমিকা ??
তোর মত কাউয়ার
সাথে কে প্রেম করবে শুনি !!
- ওই পেঁচী আমার কথা টা শোন
আগে??
- উফফ কি বলবি তাড়াতাড়ি বইলা
ফোন রাখ ঘুমাবো
- হুম মন দিয়ে শোন, কিছুদিন আগে
পাশের ফ্লাটে নতুন ভাড়াটিয়া
আসছে। একটা মেয়েকে আমার চরম
ভালো লেগে গেছে দোস্ত !! ওহ কি
চেহারা মাইরি,,পুরাই মাথা নষ্ট।
দুদিন চোখাচোখি হইসে। আমি তো
পুরাই ফিদা।। জানিসই তো আমার একটু
সাহস কম। তাই সামনা সামনি কিছু
বলতে পারছি না। বাড়িওয়ালার যে
ছোট মেয়ে টা আছে ওরে ধইরা
অনেক কষ্টে মেয়েটার নাম্বার
যোগার করসি। এখন কিভাবে শুরু করব
দোস্ত প্লিজ বুদ্ধি দে।..
একটানা অভ্রের কথা গুলো শুনে একদম
চুপ হয়ে যায় অপ্সরী। কি বলবে সে
অভ্রকে ভেবে পায় না। অন্য একটা
মেয়ে অভ্রের প্রেমিকা হবে। রাতভর
সেই মেয়েটার সাথে ওর কথা হবে।
হাত ধরে পার্কের বেঞ্চে বসে
বাদাম চিবুবে। ভাবতেই বুকের বাম
পাশে চিনচিনে ব্যাথা করছে
অপ্সরীর। আচ্ছা কাল ভার্সিটি আয়
কথা হবে। এখন
রাখি। গুড নাইট। কল টা কেটে ফোন
টা বালিশের পাশে রাখতেই
চোখের পাতা ভিজে আসে অপ্সরীর।
কাল রাতে কোনো ভাবেই চোখের
পাতা এক করতে পারেনি অপ্সরী।
অথচ আজ কি সহজ ভাবেই না টিপস
দিয়ে দিলো মেয়েটি।
- আচ্ছা দ্বিতীয় বার যদি মেয়েটা
ফোন দিয়েই দেয় কি কি বলতে হবে
তখন ??
গলা ঠিক করতে করতে বলে অভ্র।
- আরে ধুর গাঁধা সব কথা আমাকেই
শিখিয়ে দিতে হবে নাকি !! একটু
মিষ্টি করে গুছিয়ে সুন্দর ভাবে কথা
বলবি তাতেই দেখবি কেল্লা
ফাতে !! কথা গুলো বলতে অপ্সরীর
গলা আটকে আসছে বার বার। বুঝতে
পারে অভ্র।
অপ্সরীর চঞ্চলতায় কালো মেঘের
আভাস ফুটে ওঠে। বৃষ্টি নামার
আশংকা প্রবল।
অপ্সরীর চোখের দিকে আর তাকিয়ে
থাকতে পারে না অভ্র। এমন গভীর
অসহায়
চাহনীর দিকে বেশীক্ষন তাকিয়ে
থাকা যায় না। আচ্ছা তুই যখন বলছিস
দেখি ট্রাই করে।
যাই মেয়েটা নাম্বারে ফ্লেক্সি
দিয়ে আসি।
বলেই ব্যাগটা কাধে ফেলে বাসার
উদ্দ্যেশে হাটা শুরু করে অভ্র।..
নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে অপ্সরীর।
চারপাশের বাতাস গুলো ভারী হয়ে
আসছে।নিজেকে স্থির রাখতে
পারছে না সে। কোনো এক মহা
মুল্যবান জিনিস হারিয়ে ফেলতে
যাচ্ছে সে। কালকের আগেও পৃথিবী
টা কত রঙিন মনো হত অপ্সরীর কিন্ত
আজ সেই রঙিন পৃথিবী টি এত
অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে হচ্ছে কেন ??..
রাতে খাওয়া শেষ করে একটু
বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই অভ্রের
ফোন বেজে উঠলো।
অপ্সরীর ফোন ..
- হ্যালো অভ্র
- হুম বল
- কি খবর কাজ হয়েছে ??
- না রে ওভাবেও হবে না রে।
আমি পারব না এভাবে। শুনলাম
মেয়েটা খুব রাগী। আমার তো এখনই
গলা শুকিয়ে আসছে
- ধুর বোকা তুই একবার একটু কথা বল
দ্যাখ সব ওকে হয়ে যাবে
- তুই একটা হেল্প করতে পারবি
দোস্ত ?? তুই না আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড
- কি করব?
- আমি তোকে মেয়েটার নাম্বার
দিচ্ছি তুই একটু মেয়েটার সাথে কথা
বলে সব ম্যানেজ করে দিবি
- অসম্ভব পারব না আমি
- তুই না বলতিস তুই আমার যেকোনো
প্রবলেম যেকোনো ভাবে সলভ
করবি ??
আর আজ এই সিম্পল কাজ টি করতে
পারবি না আমার জন্য ?? ওকে রাখছি
বাই
- ওই ওই দাড়া,,,দে নাম্বার দে
মেয়েটার
- এই না হলে আমার দোস্ত !! জানতাম
তুই রাজি হবি। এক মিনিট ওয়েট কর,
নাম্বার
টা মেসেজ করে দিচ্ছি। ফোন কেটে
দেয় অভ্র।
কিছুক্ষন পরই অপ্সরীর ফোনে অভ্রের
মেসেজ..
মেসেজ টা ওপেন করতে গিয়েও করে
না অপ্সরী। করতে পারে না। হাতটা
এমন কাঁপছে কেন ??..আর না অনেক সহ্য
করেছে সে। শেষ মেশ আমাকে দিয়ে
অন্যমেয়েকে অফার
করাতে যাচ্ছে ও ?? এতই সহজ !! আমি
যে ওকে ভালবাসি গাঁধা টা বুঝবে
না কেনো !!
সব কিছু কি বলে বলেই বোঝাতে
হবে !! কি পেয়েছে কি ও !! এত
দিনেও কেন বুঝলো না ও আমার মনের
কথা !!... বিন্দু মাত্র বিলম্ব না করে
অভ্র কে আবার ফোন
লাগায় অপ্সরী
- হ্যালো,,ওই অভ্র শোন, যদি ঐ মেয়ের
দিকে আর ভুলেও তাকাস তোর চোখ
তুলে ফেলবো আমি !! ঐ ছেমরির
নাম্বার এক্ষুনি ডিলেট করবি তুই!! তুই
শুধু আমাকে ভালোবাসবি আর
কাউকে না। তুই শুধু আমাকে দেখবি
আর কাউকে না !! তুই শুধু আমার সাথে
রাত জেগে কথা বলবি অন্যকোনো
মেয়ের সাথে না !! তোর হৃদয়ে শুধু
আমি থাকবো অন্যকারো বিচরন আমি
মেনে নিব না।
অভ্র কে কোনো কথা বলার সুযোগ না
দিয়ে একটানা কথা গুলো বলে ঠাস
করে ফোন
টা কেটে দেয় অপ্সরী। ফোন কেটেই
হু হু কেঁদে ফেলে মেয়েটি। কি মনে
করে যেন অভ্রের দেয়া মেসেজ টা
ওপেন করে মেয়েটি। মেসেজ টা
অপেন করতেই যেন বিশাল
একটা ধাক্কা খায় অপ্সরী। এ কি !!!
মেসেজে পাঠানো নাম্বার টা যে
ওর নিজেরই !!
ভুল কিছু দেখছে না তো !!
নাহ ওই তো ওর নাম্বারের পাশেই
কিছু কথা লেখা,,
"তোকে অনেক ভালবাসিরে গাঁধী।
বুঝিস না ক্যান ?? কতবার যে বলতে
চেয়েছি,কিন্ত
বলতে গিয়েও আটকে গিয়েছি বার
বার, তুই তো জানিস আমি ভীতুর ডিম ।
যখন
তোকে মিথ্যে মিথ্যে মেয়েটার
কথা বললাম তখনই তোর অসহায় চোখে
আমার ভালবাসা খুঁজে পেয়েছজ
এবার কি একটু প্রাণ ভরে লক্ষী
ডাকতে পারি ?

Comments

Popular posts from this blog