:: -আমি তোমাকে ভালবাসি তুমি কি
আমার হবে.....?
.
হঠাৎ এই প্রস্তাব শুনে একটু ভ্যাবচাকা
খেয়ে যায়
রীতু...... লাইফে অবশ্য ছেলেদের কাছ
থেকে, অনেকগুলো প্রপোজ
পেয়েছে.... কিন্তু এটা অন্য সবগুলোর
থেকে ব্যতিক্রম.... বুঝতে পারছে না কি
করা উচিত...!
নিজের মধ্যে অহংবোধ ও জেগে
উঠছে..... উঠাই স্বাভাবিক, দেখতে প্রচন্ড
সুন্দরী সে, বলতে গেলে ধনী বাবার
অতি আদরের দুলালী, লেখাপড়ায় ও
মোটামুটি প্রথম দিকের স্টুডেন্টদের মধ্যে
একজন... আর স্বাভাবিক ভাবেই...
অহংবোধের কারণে রীতুও অন্য
প্রস্তবগুলোর মত এই প্রস্তাবও অতটা গায়ে
নেয় না.....
কিন্তু , সবেমাত্র এস,এস সি পরীক্ষা
দেওয়ায় এখন তার হাতে অফুরন্ত অবসর, আর
এই সময়ে একজনকে কাছেপিছে ঘুরতে
দেখার মজা নেওয়ার সুযোগটা সে
হাতছাড়া করতে চাইল
না.... তাই সে কিছুক্ষণ ভেবে
প্রপোজালটা এক্সেপ্ট করে নিল.... এই
ভেবে যে, আর যাই হোক না কেন, ওকে
দিয়ে টাইম পাস তো করা যাইতে
পারে.....
.
অন্যদিকে , প্রপোজালকারী ছেলেটা হল
রাইক.... নামটার মত ওর জীবনটাও বড় অদ্ভুত,
রাইকও বড়লোক বাবার একমাত্র আদরের
সন্তান.... তবে লাইফের ব্যাপারে সে
অতটা ভাবে না.... পড়ালেখায় ও তেমন
ভাল না, কারন সে ভাবে পড়ালেখা আর
বাঁধাধরা জীবন তার জন্য নয়, তবে মাত্র
কিছুদিন আগে তার সাদাকালো জীবনে
রংতুলির রঙিন ছোঁয়া নিয়ে আসলো
রীতু... রীতু ওদের পাশের বিল্ডিং এ
থাকত.... প্রথম দেখাই তেই সে প্রচন্ড
ভালবেসে ফেলে রীতুকে..... যার বিরহ
সহ্য করতে না পেরে মনের সব সাহস একত্র
করে আজ সে রীতুকে প্রপোজ করল.... আর
রীতুও গ্রীণ সিগনাল দিয়েছে..... তাই
রাইকের আজ মনে হচ্ছে যেন, পৃথিবীর
সবচেয়ে সুখী মানুষটা হয়ত সে......
এভাবেই শুরু হয় রাইক ও রীতুর পথচলা.....
রাইক রীতুকে আর জীবনের থেকে
বেশি ভালবাসত....
.
আর, রীতুর কাছে এটা অনেকটা
ফাইজলামীর মত..... বলা যায় অনেকটা
টাইমপাস! কারণ, সবদিক থেকে গুণী হওয়ায়
রীতুর দেমাকী মনের কাছে, রাইকের
ভালবাসায় সিক্ত মনের অনুভূতিগুলোর
তেমন কোন মূল্যই নেই, তার উপর রাইক
পড়ালেখায় অমনযোগী, যার মানে তার
ভবিষ্যত ও অনেকটা অস্পষ্ট.... তাই,
সম্পর্কটার প্রতিও রীতুর তেমন আগ্রহই
ছিলনা... এ ছিল তার জন্য শুধুই ছলনা.... ভালই
চলছিল এই ছলনাময়ী ভালাবাসার
অভিনয়.....
হঠাৎ একদিন রাইক রীতুকে বিয়ের প্রস্তাব
দেয়, ফ্যামিলি স্ট্যাটাস একই হওয়ায়, এতে
কোন সমস্যাই ছিল না.... কিন্তু রীতু
রাইকের এই প্রস্তাবকে সম্পূর্ণ ফিরিয়ে
দেয়...
রাইকও নিজের নিষ্পাপ ভালবাসার
অধিকার নিয়ে ক্রমাগত রীতুকে অনুরোধ
করতে থাকে.... এক পর্যায়ে রীতু
রাইককে চড় দেয়......
এতে মহাকালের এই স্থিরবিন্দুটিতে
এসে
রাইক যেন নিজের গালকে বিশ্বাস করতে
পারছে না...... একসময় সে মাথা নিচু করে
রীতুর সামনে থেকে চলে গেল, বিরক্ত
হয়ে রীতুও সেদিন বাসায় ফিরে যায়,
পরদিন সকালে, ঘুম থেকে উঠার পর রীতু
দেখল, তার রুমের জানালার পাশে একটা
চিঠি, আর একটা গিফট বক্স.... জানালাটাও
আধখোলা..... কৌতুহলী মনে সে চিঠিটা
পড়তে শুরু করে ..........
.
হাই! বাবু ,
আমি জানি, আমি তোমার তুলনায় কিছু না,
কোথায় তুমি আর কোথায় আমি, কিন্তু তুমি
কি জানো, আমি তোমায় কতটা
ভালবাসি?
নিজের থেকেও বেশি!!!, দেখেছ! আজ
আকাশটা কত্ত নীল, আর জানো! আমি যখন
তোমায় এ কথাগুলো লিখছি, এই অন্ধকার
রাতটার তারাগুলো কত্ত সুন্দর করে
জ্বলছে.... তারাগুলো আমায় ডাকছে, বাবু!
জানো বাবু!! আমি মরতে চাই না, কিন্তু
তুমি যে আমায় বড্ড ঘৃণা কর.... আমাকে
নিজের যোগ্য মনে কর না, জানো, সেই
ঘৃণা আর অবহেলা সহ্য করে বেঁচে থাকার
শক্তি আমার নেই...
আমার কিউট শালীটার জন্য একটা চকলেট
বক্স কিনছিলাম, আর তোমার কাজিন
অনন্যার জন্য একটা ব্রেসলেট, ও ওটা আমার
কাছে চাইছিল.... আমার শেষ গিফটগুলো
ওদের দিয়েদিও প্লিজ! আর গিফট
পেপারে মোড়া ডাইরীটা শুধু তোমার
জন্য, আর অনেক বেশি ভালবাসা....
জানো বড্ড অভিমান হচ্ছে তোমার উপর,
তুমি কেন বুঝলা না বল তো, আমি যে
তোমায় অনেক বেশি ভালবাসি.... বাবু"!
তুমি তখন বুঝবা, যখন আমি আকাশে চলে
গিয়ে, বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে তোমার সব
দুঃখ মুছে দিব,
আর সূর্য হয়ে তোমার সম্পূর্ণ জীবনকে
আলোকিত করে রাখব....
আর, এখন তো আমি তোমায় সারাদিন -
সারারাত ধরে দেখব, তুমি রাগ করবে না
তো!!! বাবু! আমি তোমায় অনেক
মিস করব.....
তাইতো, পৃথিবীর অন্য পাড়ে আমি
তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছি বাবু.....
"!!
-- রাইক,
.
চিঠিটা পড়ে শেষ করার আগেই, রীতুর
চোখে শিশিরবিন্দু জমতে দেখা গেল.....
ওর হাত কাঁপছে! ছেলেটা তাকে এতটা
ভালবাসল, আর সে কিনা বুঝতেই পারে
নি..... পাশের বিল্ডিং এ চিৎকার
চেঁচামেঁচি শোনা যাচ্ছে... কিন্তু রীতুর
পায়ে ত দাঁড়াবার শক্তিই নেই........
.
বাস্তব পৃথিবীর রীতুরা জানে না,
রাইকের মত ছেলেরা বড্ড অভিমানী
হয়.... তাদের কাছে ভালবাসাটাই বেঁচে
থাকার মাধ্যম.....
জীবনের বিনিময়ে হলেও তারা শুধু
ভালবাসতেই জানে........!

Comments

Popular posts from this blog