- কোথায় তুমি ?
- এইতো বাসে উঠলাম।
- মাত্র বাসে উঠছ ? এতক্ষণ কি করছিলা ?
- ওই বন্ধুরা ছিলো তো, ওদের সাথে একটু আড্ডা দিয়েছিলাম।
- ভালো করছো, এখন তাড়াতাড়ি আসো। তুমি না আসলে আমি কিন্তু কেক কাটবো না।
- আচ্ছা, আসতেছি।
.
কথাটা বলেই লাইনটা কেটে দিলো বিপলু। আজ পুষ্পের জন্মদিন। বিপলু ভেবেছিলো পুষ্পকে নিয়ে আজ দূরে কোথাও ঘুরতে যাবে কিন্তু তা আর হলো না। পুষ্পের বড় বোন পুষ্পের আর বিপলুর সর্ম্পকের কথা জানে। তাই আজ পুষ্পের জন্মদিন উপলক্ষে বিপলুকে তাদের বাসায় দাওয়াত দিয়েছে। যদিও পুষ্পদের বাসার সামনে দিয়ে বিপলু অনেক ঘুর ঘুর করেছে কিন্তু কখনো বাসায় ঢুকা হয়নী। আর আজ হবু শশুর বাড়ি যাবে, জামাই আদর পাবে কথা গুলো ভাবতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেল বিপলু। কিন্তু চিন্তা হল পুষ্পের আম্মুকে নিয়ে।
.
ঠিক পাঁচ মাস আগে পুষ্প ওর আম্মুকে নিয়ে পি.জিতে যায় ডাক্তার দেখাতে। বিপলুও পুষ্পের সাথে দেখা করতে সেখানে যায়। দুজনের দেখা হলেও পুষ্পের আম্মুর জন্য তাদের মাঝে কোন কথা হয়নী। বিপলু সেখানে অনেকক্ষণ থাকে আর তাদের মাঝে মেসেজিং চলতে থাকে। এক পর্যায়ে ডাক্তার দেখা শেষ হলে তারা বের হয়ে একটা দ্বোতালা বি.আর.টি.সি বাসে উঠে। বিপলুও তাদের অনুসরণ করে সেই বাসে উঠে। বাসে একটাই সিট খালি থাকায় পুষ্পের আম্মু সেই সিটে বসে পড়ে আর পুষ্প সামনে দাড়িয়ে থাকে। বিপলুও গিয়ে পুষ্পের পাশে দাড়ায়। একটু পরে বিপলু সুযোগ বুঝে পুষ্পের আরেকটু কাছে যায় আর পুষ্পের হাতটা ধরে। পুষ্প হাত সরাতে চাইলেও বিপলু হাত ছাড়ে নি। ব্যাপারটা অনেকটা রোমান্টিক ছিল। পুষ্প ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে বিপলুকে মেসেজ করে আর বিপলু পাশে থেকে রিপ্লাই করত। দুজন পাশাপাশি থেকেও কথা বলতে পারছে না পুষ্পের আম্মুর জন্য। এভাবে অনেকক্ষণ চলতে লাগল। এক পর্যায়ে পুষ্প আর বিপলুর গতিবিধি পুষ্পের আম্মুর সন্দেহ হয়। পুষ্পের আম্মু বিপলুর দিকে আড় চোখে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে। ব্যাপারটা খারাপ দিকে যেতে পারে আর পুষ্পের সমস্যা হতে পারে এই চিন্তা করে বিপলু পরবর্তী ষ্টান্ডে নেমে যায়। কথা গুলো ভাবতেই চিন্তাই পড়ে গেল বিপলু। যদি আজ পুষ্পের আম্মু চিনে ফেলে তাহলে নিশ্চিত শেষ।
.
বাস থেকে নেমে একটা রিকসা নিয়ে পুষ্পদের বাসায় গেল বিপলু। রিকসা থেকে নেমে পিছনে তাকাতেই দেখল পুষ্প গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে। পুষ্পের পরনে সাদা-কালো একটা ড্রেস। দেখতে অনেক সুন্দর লাগছিলো পুষ্পকে। আস্তে আস্তে পুষ্পের সামনে গেল বিপলু।
.
- এতো দেরি হল কেন ?
- রাস্তায় জ্যাম ছিলো অনেক।
- রাস্তায় জ্যাম ছিলো না ছাই।
- সত্যি বলছি।
- আমি সেই কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি তুমি জানো।
- সরি....
- আচ্ছা ঠিক আছে। আমাকে কেমন লাগছে বলো তো ?
- অনেক সুন্দর লাগছে।
- আমি জানি তোমার সাদা-কালো ড্রেস অনেক পছন্দ। আর তুমি আসবে দেখেই আজ আমি এই ড্রেসটা পড়েছি। তুমি না আসলে যা পরনে ছিলো তাই পড়ে কেকে কাটতাম।
- সত্যি ?
- তিন সত্যি।
- এই নেও। (পুষ্পকে একটা বক্স বাড়িয়ে দিয়ে বিপলু)
- কি এটা।
- খুলেই দেখো
- (বক্সটা খুলে) ওয়াওওওওওও……..!!! কানের দুল।
- হুম, তোমার পছন্দ হয়ছে ?
- অনেক গুলা।
- আসলে সরি। মাসের এই সময়ে হাতে একদম টাকা থাকে না তাই ভালো কোন গিফট দিতে পারিনি। তাই সামান্য একজোড়া......
- আরে না সরি বলতে হবে না। আমার জন্য এটাই অনেক। আর তাছাড়া তুমি আসছো তাতেই আমি অনেক খুশি। আমার আর কিছু চাই না।
- এখন কি নতুন জামাইকে দরজায় দাড় করিযে রাখবা। বরণ করবা না ?
- ইসসস, আসছে আমার নতুন জামাই!!
- তো কি ? আমি এই বাড়ির জামাই। যাও বরণ ঢালা নিযে আসো, ফুলের মালা নিযে আসো।
- হয়ছে, আম্মু দেখলে কি বলবা কিছু চিন্তা করছ ? যদি চিনে ফেলে ?
- সেটাই তো ভয়ের বিষয়। আচ্ছা আপু কি বলছে ?
- আপু বলছে তুমি ওনার বান্ধবী সায়লা আপুর ছোট ভাই।
- ওহহ, বুঝছি। কিন্তু সায়লাকে আপুকে আমি চিনমু কেমনে ?
- সমস্যা নাই, তুমি আসো আমার সাথে। সায়লা আপু ভিতরে আছে, আমি তোমাকে চিনিয়ে দিচ্ছি।
.
পুষ্পের সাথে ভিতরে চলে গেল বিপলু। সেখানে পুষ্পের দুইটা বান্ধবী, পুষ্পের বড় বোন আর তার বান্ধবী সায়লা ছাড়া আর কেউ ছিলো না। পুষ্প একে একে তার বান্ধবী আর সায়লা আপুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল বিপলকে। পুষ্পের বান্ধবীদের সাথে কথা বলতে লাগল বিপলু। একটু পরে পুষ্পের আম্মু কেক নিয়ে রুমে এল। পুষ্পের আম্মুকে দেখে বিপলুর হাটবিটটা একটু বেড়ে গেলে। বিপলু গিয়ে চুপচাপ সোফায় বসে রইল। হঠাৎ পুষ্পের আম্মুর চোখ বিপলুর দিকে পড়ল। তিনি বিপলুর দিকে এগিয়ে আসলেন
.
- আসসালামু_আলাইকুম (দাড়িয়ে সালাম দিলো বিপলু)
- ওয়ালাইকুম_আসসালাম। তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না বাবা ?
- আমি সীমার ছোট ভাই। না, সরি... সরি... আমি সায়লার ছোট ভাই। (অনেকটা নার্ভাস হয়ে বলল বিপলু)
- কিন্তু তোমাকে কোথায় যেনো দেখেছি ?
- নাতো আপনার সাথে আমার কোন হাসপাতালে দেখা হয়নী।
- না হাসপাতালে না। কেন জানি মনে হচ্ছে তোমার সাথে আমার কোন বাসে দেখা হয়েছে। বি.আর.টি.সি বাসে নাকি কোথায় যেনো।
- বি.আর.টি.সি বাসে ? ভুলেও না। আমি আজ পযন্ত কোন বি.আর.টি.সি বাসে উঠি নাই, এমন কি কারোর সাথে দাড়িয়েও যাই নাই।(কোন নিশ্বাস না ফেলেই কথা গুলো বলে ফেলল বিপলু)
- তুমি এমন করে কথা বলছ কেন ?? নার্ভাস মনে হচ্ছে ?
- না আন্টি নার্ভাস না। আসলে আমার যখন খুব পানির পিপাসা পায় তখন আমার কথা এলোমেলো হয়ে যায়। আমি পানি খাবো ।
.
কথাটা বলেই পানি খেতে চলে গেল বিপলু। পুষ্পের আম্মুর ব্যাপারটা নিয়ে আর কথা বলল না। পানি খেয়ে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলল বিপলু। যাক বাবা বাচাঁ গেল। একটু পরেই পুষ্পের জন্মদিনের কেক কাটা হল। পুষ্প সবাইকে কেক খাইয়ে দিলো কিন্তু বিপলুকে খাওয়ানো হল না। পুষ্পের আম্মু যখন কোন একটা কাজে অন্য রুমে গেল পুষ্প তখন বড় একটা টুকরা কেক এনে বিপলুর মুখে ঢুকিয়ে দিল। বিপলু হা করে পুষ্পের দিকে তাকিযে রইল আর পুষ্প কেকের কিছু অংশ বিপলুর গালে লাগিয়ে দিয়ে অন্য রুমে দৌড়ে চলে গেল। “পুষ্পের দুষ্টামি গুলো এখনো গেলো না” কথাটা ভেবে বিপলুর মুখের কোনে হাসি ফুটে উঠল।

Comments

Popular posts from this blog