শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন সারা
দেশে বিয়ের ধুম লেগেছে! শীতের
সাথে বিয়ের কি সম্পর্ক? সেটিও
একটা রহস্য! আজ আমার ফ্রেন্ড লিস্টের
তিন তিন জনের বিয়ে। সে উপলক্ষে
আজ পোষ্ট করছি আরেকটি বাসর
রাতের পরমাণু গল্প! (অবশ্যই লুতুপুতু)
.
জীবনে প্রথম বারের মত বাসর ঘরে
ঢুকতে যাচ্ছে জাহিদ। একজন মানুষ
জীবনে সাধারণত একবারই বাসর ঘরে
ঢোকার সুযোগ পায়। যাহোক সেটা
ব্যাপার না। লাভ ম্যারেজ হলে তবু
একটা কথা ছিল। কিন্তু এটি তার
অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ। সংগত কারণেই
তার বুকের ভিতর ধুকপুক করছে। ছেলে
মানুষ তাতে কি? অ্যারেঞ্জ
ম্যারেজের বাসর রাতে প্রত্যেক
সাহসী ছেলেরই বুকের ভিতর ধুকপুক
করে। জাহিদ বাসর ঘরে ঢুকেই খেয়াল
করলো, তার বউ মুখ ভারী করে
বিছানার এক কোণায় বসে আছে।
মেয়েটির চোখে মুখে যেন রাজ্যের
হতাশা মেশানো!
.
বিয়ের প্রথম রাতে মেয়েরা একটু আধটু
মন মরা হয়েই থাকে, এটা স্বাভাবিক।
আস্তে আস্তে রাত যত গভীর হয়
মেয়েদের মন তত নরম হতে থাকে।
কিন্তু না, এই মেয়েটি পুরাই
অস্বাভাবিক। রাত প্রায় ২ টা পার
হয়ে গেলো, তবুও মেয়েটি গম্ভীর হয়ে
বসে আছে। এর আগে অবশ্য জাহিদ বেশ
কয়েকবার মেয়েটির সাথে কথা
বলতে চেয়েছে, কিন্তু মেয়েটি তার
কোনো কথার উত্তর পর্যন্ত দেয়নি!
জাহিদ একবার ভাবলো, সে ফেসবুকে
ঢুকে স্ট্যাটাস দিবে- "হাই ফ্রেন্ডস
বাসর ঘর থেকে বলছি। রাত প্রায় শেষ
হয়ে এলো অথচ বউ আমার সাথে
কোনো কথাই বলছে না। এখন আমি কি
করবো উগান্ডা?" জাহিদ স্ট্যাটাসটা
মনে মনেই কল্পনা করলো। ফেসবুকে আর
ঢুকলো না। পাছে সবাই কি না কি
কমেন্ট করবে! কেলেঙ্কারির ব্যাপার
স্যাপার!
.
জাহিদও চুপচাপ বসে আছে। তার মনে
হচ্ছে, আরেকটু কথা বলাতে জোর
করলেই মেয়েটি হয়তো ফুঁপিয়ে
কেঁদে দিবে! রাত তখন ২:৫৫ বাজে।
রাতের নিরবতা ভেঙ্গে জাহিদকে
অবাক করে দিয়ে মেয়েটি বলে
উঠলো-
"এই যে শুনছেন? আপনি কি বিয়ের
আগে প্রেম করেছেন?"
হঠাৎ চুপ করে থাকা বউটার মুখ থেকে
এরকম একটা কথা শুনে জাহিদ
খানিকটা বিষম খেল! পাশেই
টেবিলে পানি রাখা ছিল। জাহিদ
ঢকঢক করে তিন সেকেন্ডে এক গ্লাস
পানি সাবাড় করে এসে মিনমিন করে
বললো, "ইয়ে না মানে প্রেম করিনি
কোনোদিন।"
মেয়েটি বলল, "সত্যি তো? চোখ ছুঁয়ে
বলুন!"
জাহিদ বাধ্য ছেলের মত আলতো করে
তার দু’চোখ স্পর্শ করলো।
নতুন বউ বললো, "জানেন, আমার না
প্রেম করে বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল খুব!"
জাহিদ হা করে তাকিয়ে আছে
মেয়েটির দিকে! বলে কি এই মেয়ে?
কিছুক্ষণ আগেই কি এই মেয়ে ঘোমটা
টেনে চুপচাপ বসে ছিল? প্রশ্ন করলেও
কোনো উত্তর দিচ্ছিলো না?
মেয়েটি নিজে থেকেই ঘোমটা
পুরোটা উঠিয়ে প্রতিউত্তর পাবার
জন্য জাহিদের দিকে তাকিয়ে আছে।
জাহিদ শুকনো মুখ টা হাঁসি হাঁসি করে
বললো, "ইয়ে, তাহলে প্রেম করে
বিয়ে করলেই পারতে! বাবা-মা'র
পছন্দ করা ছেলের সাথে বিয়েতে
রাজী হলে কেন ?"
কথা গুলো খুব সহজ ভাবে বললেও, বলার
সময় বুকের ভিতরে কেমন যেন কষ্ট
হচ্ছিলো জাহিদের। মেয়েটি খুব সহজ
ভঙিমায় বললো, "ইন্টারমিডিয়েট টা
তো পড়তে পড়তেই শেষ, ভেবেছিলাম
ভার্সিটি তে গিয়ে সুন্দর একটা
ছেলে দেখে চুটিয়ে প্রেম করবো,
তারপর পালিয়ে বিয়ে করবো। কিন্তু
সেটা আর হলো কই?"
.
নাহ মেয়েটি মোটেও অতটা
শান্তশিষ্ট না, যেমন টা জাহিদ
ভেবেছিলো প্রথমে। মেয়েটি চঞ্চল,
একটু বেশীই চঞ্চল। একটা মেয়ের
চাঞ্চল্যতা ও ছেলেমানুষি অনেক সময়
একটা ছেলেকে মুগ্ধ করে। রাত
বাড়ছে, বাড়ছে জাহিদের মুগ্ধতাও।
মেয়েটির কথা যেন থামছেই না। সে
এখন নিজেই কথার ফুলঝুরি ফুটাচ্ছে। আর
জাহিদ যেন নির্বাক শ্রোতা!
"আচ্ছা, আমি যদি আপনার সাথে এখন
থেকে একটু একটু প্রেম করতে চাই আপনি
কি রাগ করবেন? যদি রাগ না করেন,
তাহলে চলেন না আমরা প্রেম করি?"
জাহিদ তব্দা খেয়ে গেল নতুন বউয়ের
কথা শুনে! সে কোমল গলায় বললো,
"ইয়ে কিভাবে প্রেম করবো?"
মেয়েটি বলল, "কোথাও থেকে
আরেকটা মোবাইল ফোন নিয়ে আসুন।
আপনার কাছে তো একটা আছেই। দুটো
হলেই চলবে!"
নতুন মিষ্টি বউ এর মুখ থেকে এরকম কথা
শুনে রাগ হওয়ার সাধ্য কোনো পুরুষের
নেই। সাধ্য নেই তার কথা না রাখারও।
জাহিদ উঠে গিয়ে চার্জে লাগানো
তার রাফ ইউজ করা ফোনটা এনে এবং
তার পাজামার পকেটে রাখা
মোবাইলটা বের করে দুটো মোবাইলই
নিয়ে এসে বউয়ের হাতে দিলো।
মেয়েটি বললো, "আরে গাঁধা, দুটো
ফোনই আমাকে দিচ্ছেন কেন? একটা
নিজের কাছে রাখুন। না হলে প্রেম
করবেন কিভাবে?"
.
গভীর এই রাতে বাসর ঘরে দুটো মানুষ
খাটের দু প্রান্তে মুখোমুখি শুয়ে শুয়ে
মোবাইল ফোনে চুপিচুপি কথা বলে
যাচ্ছে আপন মনে। মোবাইলে প্রেম
করার সাথে সাথে মোবাইল ফোনের
অপর প্রান্তে থাকা মানুষটিকে একদম
দেখাও যাচ্ছে জীবন্ত!এর চেয়ে
অসাধারন সুখের মুহুর্ত আর কি হতে
পারে! মেয়েটি কথা বলতে বলতে,
থুক্কু, মোবাইলে প্রেম করতে করতে
হেসেই কুটিকুটি হচ্ছে। তার চোখ দুটো
জাহিদের চোখে পড়তেই লজ্জায় লাল
হয়ে চোখ নামিয়ে নিচ্ছে।
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের
কথাও বাড়ছে। বাড়ছে হাজারো স্বপ্ন
আকাঙ্ক্ষা জমানো সে রাত।
মেয়েটি হঠাৎ খেয়াল ভাবতে
লাগলো, "তার জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রেম
হয়তো বিয়ের পরেই লেখা ছিলো,
তাই হয়তো তার জীবনে আগে থেকে
কখনো প্রেম আসেনি। এটা হয়তো
সৃষ্টিকর্তার কোনো মজার খেলা!"
ভাবতে ভাবতে মেয়েটার চোখ দুটো
কিছুটা চিকচিক করে উঠলো যেন!
ওদিকে জাহিদ মোবাইলে বার বার
বলছে- "এই, আর কতক্ষণ ফোনে কথা
বলবো? রাত তো প্রায় শেষই হয়ে
যাচ্ছে" মেয়েটি খানিকটা
ঝাঁঝাঁলো গলায় বললো- "রাত শেষ
হচ্ছে তো কি হয়েছে? ইশশ সখ কত! আজ
আমরা সারা রাত ফোনে প্রেম
করবো। খবরদার ফোন রাখবা না! ফোন
রাখলে কিন্তু ব্রেকাপ!"
জাহিদ হতাশ হয়ে ফোনটা কানে ধরে
বাধ্য ছেলের মত শুয়ে আছে। মেয়েটি
জাহিদের মনের অবস্থা বুঝে
মিটিমিটি হাসছে। জাহিদের মনের
অবস্থাটা যেন স্বয়ং উপরওয়ালাও
বুঝতে পারলেন। না হলে একটু পরেই
দুটো মোবাইলেরই ব্যালেন্স শেষ হয়ে
যাবে কেন?

Comments

Popular posts from this blog