কলেজের প্রথম বছর ছিল… পরিচয় হল… বন্ধুত্ব হলো… ভাল লাগলো… তারপর প্রেম নিবেদন… তারপর শুধুই ভালবাসা| নাহ্! এত নিরামিষ ছিল না আমাদের গল্প| এত নিরামিষ হলে হয়তো এভাবে সাতটা বছর পার করে দিতে পারতাম না দুজনে|
সেই সাত বছর আগের কথা… কিছুদিন হলো কলেজে ভর্তি হয়েছি| হঠাৎ অপরিচিত কারো একটা ই-মেইল নজরে পরলো| খুব সহজ একটা ধাঁধা লেখা ছিল ই-মেইলে| সাথে একটা মোবাইল নাম্বারো ছিল, আর লেখা ছিল যদি ধাঁধার উত্তর জানা থাকে তাহলে যেন সেই নাম্বারে পাঠিয়ে দিই| ধাঁধার উত্তর লিখে পাঠিয়ে দিলাম আর জানতে চাইলাম তার পরিচয়, তবে ই- মেইলের উত্তর ই-মেইলেই… মোবাইলে দিয়ে নিজের মোবাইল নাম্বারটা একটা অপরিচিত মানুষকে দিয়ে বিপদে পরবো নাকি!!?? কিছুদিন পর আবিষ্কার করলাম ছেলেটা আমার সেকশনেরই! কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না কে সেই শাখামৃগ যে আমাকে এত দুশ্চিন্তায় ফেলে দূরে বসে মজা নিচ্ছে!!?? পরে জানতে পারলাম যার দিকে কখোনো চোখই পরেনি, যার নামটাও কখোনো জানা হয়ে ওঠেনি ছেলেটা সেই… সানিয়াত… সানিয়াত মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন|
বন্ধুত্ব হলো… খুব ভাল বন্ধুত্ব হলো… রাতে মোবাইলে কথা না বললে চলতোই না… ধীরে ধীরে কখোন যে বন্ধুত্বটা দুর্বলতা হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না! হয়তো নিজেকে বা ওকে বুঝতে দিতে চাইতাম না অনুভূতিটা| ভয় হতো… যদি বন্ধুত্বটাই হারিয়ে ফেলি!? তবু মনের মাঝে কোন এক কোণায় হালকা ব্যথা অনুভূত হতো, যখোন ও ঐ সেকশনেরই সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটার কথা বলতো| হালকা ব্যথা বললে বোধহয় ভুল হবে… আগুনের একটু আঁচ লাগলেই যেমন জ্বলা শুরু করে… আমারো তখোন ভেতরটা জ্বলতো! একটা কথা আছে না… “বুক ফাটে তাও মুখ ফোটেনা”… ঠিক ঐ রকম!
জানুয়ারী ২০০৫ থেকে ডিসেম্বর ২০০৫… আমাদের বন্ধুত্ব আরো গাড়ো হলো… আমাদের ছোট খাট পছন্দ অপছন্দ শেয়ার করা হলো| যদিও আমাদের ক্লাসমেটদের ধারণা আমরা তখোন থেকেই প্রেম করি| ধারণাটা আরো গাড়ো হয়েছিল যখন ও ক্লাসের একটা ছেলেকে আমাকে উত্তক্ত করার জন্য ঝাড়ি দিয়েছিল| ধারণাটা নি্শ্চিত সন্দেহের রূপ নেয় যখন আমি ওর হাতে কলেজের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে একটা চিঠি ধরিয়ে দিই| চিঠিতে কি লিখেছিলাম মনে নেই, তবে সেটা কোনো প্রেমপত্র ছিল না এটা নিশ্চিত… সেটা ছিল ওর ওপর আমার অভিমানের বহিঃপ্র্রকাশ মাত্র| ও আমাকে এখন প্রায়ই বলে চিঠিতে নাকি অসংখ্য বার আমি লিখছলাম “আমি তোমার খুব ভাল Friend হিসেবে বলছি…”| সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিলো... চিঠিটা ওর পকেটে ছিল... বৃষ্টিতে আমার চিঠিটা নাকি ভিজে একাকার|তার কিছুদিন পর আমি আমার ২য় বর্ষে কলেজ বদলিয়ে ফেললাম| ফিরে গেলাম আমার স্কুলেরই কলেজ শাখায়| তারপর আমার মোবাইল হারিয়ে গেল… সাথে ওর নাম্বারটাও| সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ| মাঝেমাঝে ই-মেইল Check করতাম… যদি ও কিছু পাঠায়… কিন্তু দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কিছুই পেতাম না| নিজেকে সান্তনা দিতাম… এই বুঝি ভাল হলো… Out of sight, out of mind!
পর্ব : ২
জানুয়ারী ২০০৬ থেকে ২০০৬ ডিসেম্বর… এর মাঝে অনেক উত্থান পতন হয়েছে দুজনেরই… এসেছে কিছু পরিবর্তন… ৪ বছর বয়স বেড়েছে… কলেজ শেষ হয়েছে… ২০০৭ এর জানুয়ারী থেকে আমি মেডিকেল ছাত্রী হয়েছি আর ও হয়েছে ইঞ্জিনীয়ার ছাত্র| তখনো মাঝেমাঝে ই-মেইলCheck করতাম… হঠাৎ ২৯ জানুয়ারী ২০০৭ একটা ই-মেইল নজরে পরলো… from Md. Sarwer Hossain| আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না| ই-মেইলটা ওর নতুন Address থেকে পাঠিয়েছিল ওর Contact list এর সবাইকে| আমি আর সবাই এক হলাম!? এই ভেবে আর Reply করা হলোনা| তারপর ২১ ফেব্রুয়ারী ২০০৭ আরেকটা ই-মেইল এলো| ই-মেইল পড়ে প্রথমে খুব রাগ হলো… কারণ as usual সেখানে আমাকে Jealous করানোর মত কথা লেখা ছিল| ই-মেইলের শেষ লাইন গুলো ছিল এরকম “SunSi dr ri porteSo khubi valo. amr amma Sune khub khuSi hoiSe. kau dr hoiSe Sunle amma khuSi hoya jay, amder aaSe paSe Sob to enginr tai. ajk to monehoy tmr bondo. ok valo thako.... bye… connection raikho amak vuila gaSo ? ? ! ? ! ! ! ?” তখন কেন জানি আর রাগ করে থাকতে পারলাম না… reply একটা করেই দিলাম| তারপর আবার শুরু হলো যোগাযোগ| ও যেমন আমাকে প্রায়ইJealous করানোর মত কথা বলতো আমিও ওকে সব সময় Jealous করার চেষ্টা করতাম… কিন্তু ওর কোনো প্রতিক্রীয়াই ছিলনা! খুব রাগ হতো আমার!
২০০৮ এর ১৩ ফেব্রুয়ারী… আমি ওকে “Yahoo!” তে Chat-এ বেশ ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা, তোমার কাল কি কোনো Programme আছে?” ও বললো, “নাহ্, কাল কি Programme থাকবে? কেন থাকবে?” আমি বললাম, “তাহলে আমরা কি কাল TSC-তে দেখা করতে পারি?” আমি ভেবেছিলাম ও “না” বলবে| কিন্তু ও বললো “হ্যাঁ”!! বলে আমার বিপদ বাড়িয়ে দিল| প্রচন্ড রকমের ভয় ভর করলো মাথায়| এতই ভয় আর উত্তেজনা পেয়ে বসলো আমায় যে আমার হারিয়ে যাওয়া মোবাইলের সাথে যে ওর মোবাইল নাম্বারটাও যে হারিয়ে গিয়েছে সেটাও ভুলে গিয়েছ

Comments

Popular posts from this blog